৯২ থেকে ৬৮ কেজি আর ৫ থেকে ৪২ কিঃমিঃ এর গল্প
২৬ আগস্ট ২০২২ আমি প্রথম কোনো রেসে অংশগ্রহণ করি সেটা ছিল UCR 5K RUN যদিও এটা একটি ফান রান ছিল কিন্তু আমার কাছে নিজেকে অন্যভাবে আবিষ্কারের গল্প। গল্প-স্বল্প করার আগে বলে দিচ্ছি, আপনারা যারা রানিং শুরু করতে চান এবং রানিং ইভেন্টে অংশ নিতে চান তাদের জন্য এই লেখাটা হয়তো কাজে লাগতে পারে। একটু গল্প করে নেই তারপর বলছি এই রেসে অংশ নিতে কিভাবে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম।
গল্পটা হলো- আমার ওজন ৯৪ কেজি হয়ে গিয়েছিলো সাথে ছিলো আভিজাত্যের প্রতীক বিশাল এক ভুঁড়ি। ভুঁড়ি নিয়ে মজা করে অনুকাব্য লেখেছিলাম
ভুখা-নাঙ্গা লোকের কি আর এমন ভুরি হয় ?
আমার ভুরি প্রকাশ করে আভিজাত্যের জয়
কিন্তু এই ওজন আর ভুরি নিয়ে ভিতর ভিতর প্রচন্ড হতাশা কাজ করতো। খেতে হতো উচ্চ রক্ত চাপ ও গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ। ছিলো আরো নানা বিধি সমস্যা। এর পর ২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর শুরু করি আমার ওজেন কমানোর যাত্রা খাবার নিয়ন্ত্রণ সাথে দ্রুত হাঁটাহাঁটি শুরু করলাম। ভুঁড়ি কিছুটা কমে আসলো একটু একটু করে দৌড় শুরু করলাম। BDRunners গ্ৰুপে জয়েন করলাম দেখলাম বিভিন্ন রানিং ইভেন্টে লোকজন দৌড়াচ্ছে। আমারও ইচ্ছে হলো ইভেন্টে দৌড়াতে কিন্তু আমি তো টানা দৌড়াতে পারিনা ওজন তখন প্রায় ১৬ কেজি কমেছে কিন্তু টানা দৌড়াতে পারি না সাথে পায়ে ব্যথা ইত্যাদি সমস্যা। Youtube ঘেঁটে রানিং বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও দেখা শুরু করলাম। যেটা বুঝলাম আমাকে পর্যাপ্ত ট্রেনিং করতে হবে কোনো রেসে দৌড়াতে হলে। কি সেই ট্রেনিং করেছিলাম এবার বলছি।
UCR 5K RUN ইভেন্টের প্রায় ১ মাস আগে আমি ট্রেনিং শুরু করি কিন্তু তখন ও জানতাম না এই ইভেন্টে দৌড়াবো। আমি যখন ট্রেনিং করতাম প্রতিদিনের অনুভূতি ১টা নোট লিখে রাখতাম এলোমেলো ভাবে। আজ সেগুলোই একটু গুছিয়ে লেখছি যা হয়তো অনকের কাজে লাগতে পারে
দিন ১: আমি রানিং শুরু করার বেশ কয়েকটি ভিডিও দেখে যেটা বুঝতে পারলাম আমাকে রান ওয়াক রান দিয়ে শুরু করতে হবে। ধারণাটি হল ২ মিনিট হাঁটা, ১ মিনিটের জন্য জগিং করা এবং এটি বারবার পুনরাবৃত্তি করা যতক্ষণ না ৩০ মিনিট হয়। শুরুতে এক মিনিটের জন্য জগিং করাটাও যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ছিল! প্রথম দিন আমি ঘড়ি ধরে টানা ৩০ মিনিট এটা করি। কিন্তু আমাকে তো অনেক দূর যেতে হবে…
দিন ২: ওহ, ব্যথা… কিন্তু এ ব্যথা অন্তরে না, সারা শরীর জুড়ে এবং স্পষ্টতই ব্যথার তীব্রতা আমার ধারণার বাইরে… প্যারাসিটামল খেয়ে নিলাম কিন্তু মনে সংকল্প আরো দৃঢ় করলাম আমাকে পারতেই হবে। ভিডিও দেখে পরদিন সকালে কিছু স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলাম। ব্যায়ামের বাইরে ও আমাকে প্রচুর পানি পান করতে হবে এবং প্রোটিন খেতে হবে, তাই সিদ্ধ ডিম, কলা, ওটস, খেজুর খেতাম। দেখি তৃতীয় দিন কি হয় …
দিন ৩: মজার বিষয় হলো আমি স্ন্যাকসসহ সারা দিন যা খাই তা লিখে রাখছি। যে খাবারগুলি আমাকে জ্বালানী দিচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ডিম, কলা, ওটস, কাঠবাদাম, টক দই, ব্ল্যাক কফি, লাল আটা রুটি, চিকেন, মাছ, সালাদ ও অল্প ভাত। তৃতীয় দিন সন্ধ্যায় নিকেতনের রাস্তায় আমি আবার শুরু করলাম প্রথম দিনের মতোই রান ওয়াক রান দিয়ে। প্রথম দিকে ব্যথা ছিল পায়ে কিন্তু আমি তা উপেক্ষা করলাম এবং প্রচুর ঘামালাম, সাথে পানির বোতল রাখতাম। প্রায় ১০ মিনিট পর খেয়াল করলাম শরীরের ব্যথাগুলো প্রায় গায়েব। দারুন মজা পাচ্ছিলাম।
দিন ৪: আমি আগের চেয়ে বেশি ক্যালোরি বার্ন করছি তাই ক্ষুধাও বেড়েছে মনে হচ্ছে। খাবার পরিমাণ একটু বাড়ালাম। গভীর ঘুম হচ্ছে এখন। আজ আমার ট্রেনিং এর তীব্রতা একটু বাড়ানোর দিন, অর্থাৎ আজ আমি ২ মিনিট হাঁটবো এবং ৫ মিনিট জগিং করবো ১ ঘণ্টা। কিছুটা সহজ মনে হচ্ছে, যদিও পায়ে টুকটাক ব্যথা রয়েছে, পাত্তা দিলাম না।
দিন ৫: গতকালের ট্রেনিং এর তীব্রতা বাড়ানোর ফল ভোগ করছি। আজ সকাল থেকেই ব্যথার পরিমাণ বাড়লো, যদিও রাতে বেশ ভালো ঘুম হয়েছে। BDRunners গ্রুপে রানারদের বিভিন্ন পোস্ট দেখে মোটিভেটেড হচ্ছি আর গ্রিন টি খাচ্ছি। কোনো কোনো রানার দেখলাম ২১ কিমি, ৩০ কিমি দৌড়ে পোস্ট দিয়েছে। পাগল নাকি ওরা?! যাইহোক, সন্ধ্যায় ঠিক আগের দিনের মতোই ট্রেনিং করলাম, কিন্তু একটু ধীরে।
দিন ৬: আজ শুক্রবার, এবং আমি বিশ্রাম করছি। এটি আমার প্রথম সপ্তাহের প্রশিক্ষণের শেষ মাত্র, কিন্তু আমি ইতিমধ্যে আমার প্যান্ট একটু ঢিলা অনুভব করছি! বাহ্, দারুন! ওজন এর সাথে কোমরও কমছে, প্রচণ্ড মোটিভেটেড হলাম। বিশ্রামের দিনটি বেশ ভালো কাটলো। অল্প ভারী খাবারও খেয়েছি আজ।
দিন ৭: আজ সকালেই প্রতিদিনের মতো স্ট্রেচিং ব্যায়াম করলাম। শরীর হালকা লাগছে, ব্যথাও প্রায় নেই। আজ আবার ৩০ মিনিট ট্রেনিং করতে তবে যতটা সম্ভব বেশি দৌড়াতে। তাই প্রচুর ঘাম হলো। আজ একটি মজার বিষয় খেয়াল করলাম, ঘাম বেশি হলে দৌড়াতে মজাও বেশি লাগে। কেন? তা জানি না, জানার দরকার নাই। হি হি হি।
দিন ৮: আজ আশ্চর্যজনক কিছু ঘটেছে! আমি আমার জীবনে প্রথমবারের মতো ১০ মিনিট ননস্টপ রান করেছি! নিজেকে বড় মাপের রানার ভাবতে শুরু করেছি। দৌড় শেষে সে এক অন্য রকম অনুভূতি। পরে জেনেছি এই অনুভূতি আসলে এন্ডোরফিন নামক এক হরমোনের প্রভাব। আমি মনে হয় দৌড়ানোর প্রেমে পড়তে শুরু করছি।
দিন ৯: নিজের ভিতর অন্য রকম এক স্টামিনা অনুভব করছি। রাতে ভালো ঘুম হচ্ছে। আমি আর আগের মতো ঝিমাই না। নিজেকে আরো বেশি প্রোডাকটিভ মনে হচ্ছে। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়েই বেরিয়ে পড়ি নিকেতনের রাস্তা কাঁপাতে। আজও প্রায় ১২ মিনিট টানা রান করলাম, এর পর ৫-২ মিনিট হেঁটে আবার ১২ মিনিট রান, এভাবে ১ ঘণ্টা। পায়ের ব্যথা আর নেই।
দিন ১০: সকালেই প্রতিদিনের মতো স্ট্রেচিং ব্যায়াম। আমি খাবার এবং কর্মক্ষমতার মধ্যে যে নিবিড় একটি সম্পর্ক করেছে তা বুঝতে শুরু করেছি। প্রতিদিন আমার দরকার প্রায় ২২০০ ক্যালোরির মতো, আমি খাবার থেকে নিচ্ছিলাম প্রায় ১৬০০ ক্যালোরি, সাথে আমি রান করে বার্ন করছি বেশ ভালো পরিমাণ ক্যালোরি। ফলাফল, আমার ওজন দ্রুত কমছে। কোমর ৪২ থেকে এখন ৩২। কি দারুন ব্যাপার! আজও আমার রানিং চললো।
দিন ১১: আমার ওজন দ্রুত কমছে। আমার শার্ট, প্যান্ট ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। কিন্তু আমি খুশি। এবং আমি নিশ্চিত যে রানিং হল ওজন কমানোর দ্রুততম উপায়। আমার রানিং এর সময় বাড়ছে, আজ প্রায় টানা ২০ মিনিট দৌড়ালাম। নিজেকে রানিং মেশিন মনে হচ্ছে।
দিন ১২: আজ আমার ডায়েটিশিয়ানের সাথে দেখা করলাম। তিনি আমার এই দ্রুত পরিবর্তনকে প্রশংসা করলেন। ডায়েটিশিয়ান আমাকে ৩০ মিনিট শুধু হাঁটাটি করতে বলেছিলেন, কিন্তু এখন আমি প্রতিদিন ১ ঘণ্টা দৌড়াই। যার ফলাফল পাচ্ছি। তিনি জানালেন আমার শরীরের চর্বি শতাংশ কমছে খুব ভালো গতিতে! চোখ বন্ধ করে, আমি ভাবছি একটি চর্বিহীন শরীর নিয়ে হাতিরঝিলে কোনো এক রানিং ইভেন্টে ফিনিশিং পয়েন্ট টাচ করলাম! ওহ হ্যাঁ, আজ আমি আমার ছেলে দুরন্ত মিলে Chilox এর বার্গার খেয়েছি। কারণ এটা আমার প্রাপ্য।
দিন ১৩: আজ সন্ধ্যায় ব্যস্ত থাকবো তাই দুপুরেই কিছু রানিং করলাম। অসাধারণ লেগেছে, মাঝে মাঝে মনে হয় আমার এই নতুন লাইফস্টাইলের জন্য আমাকে পুরস্কৃত করা উচিত! হা হা হা, লেকের ধারে দৌড়ালাম, আমার মনে হচ্ছিল আমি একটা উড়ন্ত ঘোড়া। শরীরটা হালকা লাগছে।
দিন ১৪: আজ শুক্রবার, কিন্তু আমি আজও বিশ্রাম করব না। আমি গতকাল দুপুরেও দৌড়েছিলাম। দুপুরের রানিং খুব একটা ভালো লাগে না। প্রচণ্ড রোদে আর গরমে আমি দৌড়াতে পারি না। তবে হালকা কুয়াশা বা ঠাণ্ডায় রানিং দারুন লাগে। আজ প্রচুর ঘুম হলো, এবং মনটা ফুরফুরে লাগছে। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজ পড়ে দৌড়াতে বেরিয়েছি। আজ হালকা পেসে প্রায় ১ ঘণ্টা ধরে দৌড়ালাম। রক্তমাংসের শরীরটা যেন রানিং মেশিন হয়ে গেছে।
দিন ১৫: আজ আমার ৩০ দিনের চ্যালেঞ্জের হাফওয়ে পয়েন্টে আছি, এবং আমি রানিং উপভোগ করতে শিখে গিয়েছি মনে হচ্ছে। প্রতিদিন না দৌড়ালে শরীর ভারী লাগে। যদিও আমার ওজন কমা অব্যাহত আছে। আজ আমি প্রথম হাতিরঝিলে দৌড়ালাম।
দিন ১৬: এটি ছিল শুধু ব্যায়াম করার দিন। যদিও প্রতিদিন সকালে আমি প্লাঙ্ক, জাম্পিং জ্যাকসহ বেশ কিছু ব্যায়াম করতাম, কিন্তু আজ সন্ধ্যায়ও বিভিন্ন ধরণের ব্যায়াম করলাম একটু বেশি সময় নিয়ে। যা আমাকে ব্যথা কমাতে সাহায্য করেছে।
দিন ১৭: আজও আমি হাতিরঝিলে বিরতিহীনভাবে দৌড়ালাম। গরম আবহাওয়া আমাকে হাইড্রেটেড থাকার জন্য অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। রানাদের হাইড্রেশনের বিষয়ে বিভিন্ন দিক জানার চেষ্টা করলাম এবং তা ফলো করছি।
দিন ১৮: সন্ধ্যায় ওয়ার্মআপ শেষে দৌড় শুরু করলাম। আমি জানতে পেরেছি রানিং এর আগে সঠিক ওয়ার্মআপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ওয়ার্মআপ এর প্রতি বিশেষ নজর দিচ্ছি। আজ প্রায় ৩০ মিনিট রান করলাম। দারুণ!
দিন ১৯: আমি আজ লক্ষ্য করেছি যে আমার ত্বক আগের চেয়ে আরও ভালো দেখাচ্ছে। আমার মুখের কালো দাগগুলো অনেকটাই কমে গিয়েছে। আসলে রানিং সারাশরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে ত্বক সজীব দেখায়। বিষয়টা আমি উপভোগ করছি। ওজন আরও কমেছে। আজ আর কোনো রানিং করলাম না।
দিন ২০: আমার রানিং এর উন্নতি আমি টের পাচ্ছি। আগের চেয়ে বেশি পেস রেখে দৌড়াতে পারছি। আজ আমি রানিং এর সাথে হার্ট রেটের সম্পর্ক বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করলাম। আমি এরোবিক জোনে বেশি করে দৌড়ানোর চেষ্টা করছি। রানিং বিষয়ক ভিডিওগুলো নিয়মিত দেখছি ইউটিউবে। আমি পেসের প্রতি লক্ষ্য না রেখে কত বেশি সময় ধরে দৌড়াতে পারি সেটা দেখছিলাম।
দিন ২১: আমি লক্ষ্য করেছি যে আমার উরুর পিছনে ব্যথা হয়েছে এবং আমার গোড়ালি টাইট হয়ে আছে। আমি একটা ভিডিও দেখে জানলাম সমস্যাযুক্ত এলাকায় ম্যাসেজ করার জন্য কীভাবে টেনিস বল ব্যবহার করতে হয়। ভালো কাজে দিলো, খুব আরাম পাচ্ছিলাম যখন ব্যথার জায়গায় একটি টেনিস বল দিয়ে চাপ দিয়ে ম্যাসেজ করছিলাম। সেদিনও কোনো দৌড় করলাম না। Listen to your body.
দিন ২২: ওফ, আমার পা ভালো লাগছে! ব্যথা কমেছে। ওজন নিয়ে এখন আর ভাবছি না। আমার পায়ের মাসল টোন লক্ষ্য করলাম। পা শক্তিশালী হচ্ছে তার লক্ষণ। বিষয়টা দারুণ উৎসাহ দিলো। বিকালে একটু হালকা রান করলাম।
দিন ২৩: কিছুই না। আমি একেবারে কিছুই করিনি আজ। রাতে ঘুমের আগে ভাবলাম আমি মনে হয় ওভার কনফিডেন্ট হয়ে যাচ্ছি যা আমাকে অলস করে দিচ্ছে না তো?
দিন ২৪: সকালে প্রতিজ্ঞা করলাম আজ আমি টানা ৪০ মিনিট দৌড়াবো। ও হ্যাঁ, ভালো এক জোড়া জুতা কিনেছি। নতুন জুতা পরে সন্ধ্যায় দৌড় শুরু করলাম। অন্যরকম উৎসাহ পাচ্ছিলাম। সুন্দরভাবে আমার টার্গেট সম্পন্ন করলাম। খুশিমনে ভাবছি আমি এখন ৫ কিমি একটি রেসে দৌড়াতে পারবো। আত্মবিশ্বাস তুঙ্গে।
দিন ২৫: আজ একটি খারাপ ঘটনা ঘটেছে। আমার ডান পায়ের ছোট আঙুলের মাথায় বিশাল এক ফোস্কা পড়েছে। গতকাল নতুন জুতা পরে দৌড়ানোর ফল। কি আর করার, আজও দৌড়ানো যাবে না। মন খারাপ করে দিলো। যেটা জানলাম, একটু ভ্যাসলিন লাগিয়ে নিলে এই ফোস্কা এড়ানো যেত।
দিন ২৬: ফোস্কা ফেটে গিয়েছে কিন্তু জুতা পরে দৌড়ানো যাবে না। তাই নরম স্যান্ডেল পরে হাঁটলাম ১ ঘণ্টা। ওরে বাহ্, হাঁটলেও তো মজা লাগে!
দিন ২৭: আজও হাঁটার উপর থাকলাম। ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে খাবারে কিছু পরিবর্তন আনলাম। প্রোটিন বাড়াতে ডিম খাওয়া বাড়ালাম। ২ টার পরিবর্তে ৩টা ডিম খাচ্ছি তবে ১টি ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে। কলা খাচ্ছি প্রচুর। ওজন কমে আজ ৬৮ কেজি। শরীর থেকে ২৪ কেজি ঝরে ফেলেছি।
দিন ২৮: আজ পায়ের অবস্থা অনেকটাই ভালো। সন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়লাম নিকেতনের রাস্তায় ঝড় তুলতে। আজ ৫ কিমি দৌড়ালাম ৩৪ মিনিটে। ভেতর ভেতর প্রচণ্ড আনন্দ লাগছে। দৌড় বিষয়ক একটি পুঁথি গান লেখলাম। গানটি শুনতে পাবেন এই লিংকে: YouTube
দিন ২৯: পরের দিন অফিস বন্ধ তাই ওই দিন সকালে দৌড়াবো। তাই আজ সন্ধ্যায় স্ট্রেচিং ব্যায়াম করে তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লাম।
দিন ৩০: খারাপ খবর, সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। তাই দিনটি বৃথা গেলো।
দিন ৩১: আমার এক মাসের চ্যালেঞ্জের শেষ দিন তাই ঠিক করলাম অফিসে যাওয়ার আগে আজ দৌড়াতেই হবে। খুব ভোরে চলে গেলাম হাতিরঝিলে। শরীর গরম করে দৌড় শুরু করলাম। খুব সুন্দরভাবেই দৌড় চলছে কিন্তু ব্রিজগুলোতে উঠতে দৌড়ের গতি কমে যাচ্ছিলো কিন্তু আমি থামলাম না। পুরো হাতিরঝিল এক চক্কর দিলাম। দারুণ অনুভূতি। আমি পেরেছি। দৌড়ের সব কষ্ট ছাপিয়ে এক দারুণ তৃপ্তি জায়গা করে নিলো।
এর কিছুদিন পর জানতে পারলাম UCR 5K RUN ইভেন্টের বিষয়। আমি তাতে অংশ নিলাম এবং সুন্দরভাবে শেষ করলাম আমার জীবনের প্রথম কোনো রেস। যদিও ইভেন্টে দৌড়ানোর সময় আমার হার্টরেট বেড়ে যাচ্ছিল, ব্যাপার না। এরপর আমি অনেকগুলো ইভেন্টে অংশ নিয়েছি: ৭.৫ কিমি, ১০ কিমি, ১৫ কিমি, ২১ কিমি, ২৫ কিমি, ৪২ কিমি। দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরেও একটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছি। ভিন্ন সময়ে আমার অংশ নেওয়া ইভেন্টের তথ্য পাবেন এখানে: ইভেন্ট তথ্য। এই তো, এই বছর আমি আমার জীবনের প্রথম ফুল ম্যারাথন সম্পন্ন করেছি, সেই গল্প বলেছি এখানে: ফুল ম্যারাথন গল্প।
আসলে, আপনারা অনেকেই রানিং শুরু করতে চান। তারা এভাবে এক মাসের একটি চ্যালেঞ্জ নিয়ে নেমে পড়ুন। নিজের উপর আস্থা রাখুন। একটা জিনিস মাথায় রাখুন, আপনি কোনো অসম্ভব কাজ করতে যাচ্ছেন না। সুতরাং বিশ্বাস রাখুন, আপনি অবশ্যই পারবেন।
শুভকামনা সবার জন্য!