একটি দৌড় ,সংকল্প এবং গল্প
আমার ছোট্ট একটি অনুকাব্য আছে
একটি দৌড় মানে হলো একটি নতুন গল্প
একটি দৌড় মানে হলো কত শত সংকল্প
কি আমার গল্প ছিল, কি আমার সংকল্প ছিল সেটা একটু শেয়ার করি । আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন ২০২৩ এ হাফ ম্যারাথন ক্যাটেগরিতে অংশ নেই। নিজের ওজন ২২ কেজি কমিয়ে যেটা ছিলো দ্বিতীয় হাফ ম্যারাথন। সেই ২১ কিঃমিঃ এর দৌড় দিতে গিয়ে একটি জীবনে নতুন একটি গল্প যোগ করি কিন্তু একটি সংকল্পও করেফেলি সাথে সেটা হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন ২০২৪ এ আমি ফুল ম্যারাথন দিবো। এই একটি বছরে অসংখ হাফ ম্যারাথন সম্পন্ন করি আর দৌড়ের শেষ দিকের কষ্টকর সময়টাতে ভাবি কি দরকার ফুল ম্যারাথন দেবার? হাফ ম্যারাথনই যথেষ্ট বাদ দাও কিন্তু নিজের সাথে করা সেই সংকল্প আমাকে এই ভাবনা ঝেড়ে ফেলতে বলে। হুম এই ২৬ জানুয়ারি আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ঢাকা ম্যারাথন ২০২৪ এ প্রথম ফুল ম্যারাথন সম্পন্ন করলাম, আলহামদুল্লিহা
আমি তেমন ভালো কোনো রানার নই ,আমার প্রতিপক্ষ শুধু আমি নিজে। তাই নিজেকে নিজে ছড়িয়ে যাবার আনন্দ শুধু নিজেই উপভোগ করি কেউ তাতে ভাগ বসায় না। কিন্তু কিছু মানুষ আমার এই অর্জনের পিছনে উৎসাহ, সাহস, উপদেশ দিয়ে আমার আমাকে এগিয়ে দিয়েছে। প্রথমেই বলছি সহধর্মিনীর কথা আমার ওজন কমানের জার্নি এবং এই দৌড় এর প্রাকটিস সব সময় সাপোর্ট দিয়ে পাশে থেকেছে , অনেক ঝামেলা সহ্য করেছে হাঁসি মুখে।
আমি সত্যিই ভাগ্যবান আলট্রা ডিসটেন্স রানার ইমামুর রহমানের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি। আমার রানিং শুরু করার পর থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তার পরামর্শ পেয়েছি এবং তার রানিং স্টাইল আমাকে দারুন ভাবে প্রভাবিত করে। এই ম্যারাথনে নিজেকে খুব পুশ করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু ইমামুর ভাইয় এর পরামর্শ ছিল নিজের প্রথম ম্যারাথন টি ইনজুরি মুক্ত ভাবে কাট অফ টাইমের মধ্যে শেষ করাই আমার লক্ষ্য হোক। তাই ৪২ কিলোমিটারের দৌড় শেষ করার পর কোনো ক্লন্তি ভর করেনি। হাঁসি মুখে ফিনিসিং লাইন ক্রস করেই ইমামুর ভাইয়ের সাথে দেখা সে আমাকে প্রথম অভিনন্দন জানায় জড়িয়ে ধরে। এই অনুভূতি অনন্য।
আরেক জন হলেন নিপু দা। দাদাকে প্রায়ই ম্যাসেঞ্জারে নক ‘দিয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিতাম। উনি আমার বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব সুন্দর করে বুঝিয়ে নিতেন। রানিং নিয়ে আমি যেই অল্পবিস্তর লেখালেখি করেছি তার উৎসাহে বলা যায়।
ফয়সাল, যার রানিং দেখে আমিও রানিং শুরু করার চেষ্টা শুরু করি নিজের বিশাল দেহ নিয়ে ওই সময় আমি কোনো রানিং গ্রুপে যুক্ত ছিলাম না ফয়সালের সাথে পরিচয় অনেক আগে ২০০৬ থেকে। ফেস বুকে ওর দৌড় দেখে আমি খালি লাইক দিতাম আর ভাবতাম ওর এই স্লিম ফিগার নিয়ে কেন দৌড়ায়? ও আমাকে জয়েন করায় ঢাকা রোড রানার্স ও বিডি রানার্স গ্রুপে ব্যাস আমার দৌড়ের যাত্রা শুরু হলো ওর দেখাদেখি।
আসলে একটি ফুল ম্যারাথন সম্পূর্ণ করা শুধুমাত্র একটি শারীরিক কৃতিত্ব নয় বরং মানসিক দৃঢ়তা এবং দৃঢ় সংকল্পেরপ্রমাণ। এটি আত্ম-আবিষ্কার এবং নিজেকে নিজের সামর্থের সীমানায় ঠেলে দেওয়ার একটি যাত্রা, এবং আমি এই অভিজ্ঞতাটি আপনাদের সাথে ভাগ করে নিতে পেরে আনন্দিত।
যারা ভবিষ্যতে ফুল ম্যারাথন দিবেন , মনে রাখবেন যে ম্যারাথন ফিনিশারের প্রতিটি পদক্ষেপই একটি বিজয়। এই স্বপ্নটিকে লালন করুন, ছোট জয়গুলি উদযাপন করুন এবং রানিং কমুনিটির সাথে নিজেকে যুক্ত রাখুন এবং সবার সাথে শেয়ার করুন।
যারা আমার এই দৌড়ের যাত্রার যারা অংশ হয়েছেন তাদের প্রত্যেককে ধন্যবাদ, এবং আরো অনেক দৌড়ের গল্প, সংকল্প তৈরী করতে চাই। দোআ করবেন সবাই