এক স্বপ্নবাজের আল্ট্রা ম্যারাথন
এই লেখাটি যখন লিখতে বসলাম তার ঠিক কিছুক্ষন আগে একজন আল্ট্রা ডিসটেন্স রানার কে অভিনন্দন জানালাম। কেন জানালাম সেটা একটু পরেই বলছি। অভিনন্দন জানিয়ে অফিসের ডেস্কে বসে একটা মজার কথা মাথায় ঘুরছিলো সেটা হলো- আমি মোটামুটি রেগুলার হাফ ম্যারাথন দিতে পছন্দ করি তো এই বিষয়ে এলাকার এক বড় ভাই কম্মেন্ট করলেন “তুমি কি ভাই মানুষ? ক্যামনে ২১ কিলোমিটার টানা দৌড়াও? ” কি উত্তর দিয়েছিলাম সেটা নাই বা বললাম কিন্তু জানতে ইচ্ছা করছে কেউ যদি হাসি মুখে টানা ১০০ কিলোমিটার আল্ট্রা রান দেয় তাও আবার আবার ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তাহলে তাকে ওই বড় ভাই কি বলতো? ঠিক আছে তার সাথে দেখা হলে আবার জিজ্ঞাস করবো (আর যাই হোক অমানুষ না বলে ফেলে সরাসরি হা হা হা)। এসব নিয়ে যখন ভাবছিলাম ঠিক তখনই সেই আলট্রা রানের কল পেলাম, প্রথমেই তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বেশ কিছু ক্ষণ তার এই অর্জন নিয়ে আলাপ হলো। কল কেটে দিয়ে তাকে নিয়ে কিছু লিখতে ইচ্ছা হলো। যার প্রেরণায় আমি আমার প্রথম ফুল ম্যারাথন খুব সুন্দর ভাবে শেষ করতে পেরেছিলাম।
তিনি হলেন Imamur Rahman – An Ultra Distance Runner এইতো মার্চের ২ তারিখ তিনি ১৬ ঘন্টা ৫৫ মিনিট সময় নিয়ে Phuket 100K Ultra Marathon 2024 সম্পন্ন করেন। যেখানে এলিভেশন ছিল প্রায় ৭৮৮ মিটার। ইমামুর ভাই নিয়মিত আলট্রা দিয়ে বেড়ান আমি জানতাম আগেই কিন্তু ঐ দিন হটাৎ আমার টাইম লাইনে চোখ আটকে যায় তার একটি পোস্টে ”15.6 KM to go. Keep me in your prayers everyone.” আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না উনি অবশই আবার কোনো আল্ট্রা দিচ্ছেন। ঐ দিন রাতেই একটি ভিডিও পোস্ট করলেন বাংলাদেশের পতাকা হাতে তিনি তার স্বভাবসুলভ হাসি মুখে ফিনিশিং লাইন অতিক্রম করছেন। তার মুখ দেখে বুঝার কোনো উপায় নাই যে তিনি কতটা ভয়ঙ্কর রেস্ ট্র্যাক পারি দিয়ে এই ফিনিসিং লাইন ক্রস করলেন। ফোনে কথা বলার সময় আমি তাকে জিজ্ঞাস করেছিলাম ভাই এতো বড় একটা ইভেন্টে অংশ নিলেন এতো নীরবে কেন?! উনি আবার একটু নিরব থেকে জবাব দিলেন “হয়তো আছে কোনো একটা কারণ নাই বা বললাম…” কিন্তু আমি মনে হয় বুজতে পারছিলাম কি সেই কারণ হতে পারে।
কয়েক মাস আগে উনি UTMB TRAIL ম্যারাথনে 100km ক্যাটাগরি তে যাত্রা শুরু করেছিলেন আরো একটি মর্যাদাপূর্ণ অর্জনের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনার কারণে তার সেই যাত্রা ৬৮ কিলোমিটারে থেমে যায় যেটা আমরা সকলেই জানি। ফেইসবুক আমরা অনেকেই তাকে সমবেদনা জানাই। ফোনেযখন এই বিষয়ে ইমামুর ভাইয়ের সাথে কথা হয় তখন তার ভিতেরে কষ্ট টা আমি বুজতে পারছিলাম সেই কষ্ট ছাপিয়ে উনি বার বার বলছিলেন UTMB TRAIL ম্যারাথনে আমি বাংলদেশের পতাকা উড়াবোই। আমি ও বিশ্বাস করি উনি ঠিক এটা করে দেখবেন ইনশাল্লাহ। কিন্তু এই দুর্ঘটনার বিষয়টা না ভেবে কেউ কেউ মনে করেছে উনি হয়তো পর্যাপ্ত ট্রেনিং না নিয়েই এই ইভেন্টে অংশ নিয়ে ছিলেন। আমি নিজেই কিছু নেতীবাচক কথা শুনেছিলাম এই বিষয় টা নিয়ে। কিন্তু একটা বিষয় কিন্তু পরিষ্কার উনি ইচ্ছা করে কিন্তু রেস থেকে সরে দাঁড়াননি। দুর্ঘটনার কারণে বাধ্য হয়ে থামতে হয়েছে। যাইহোক আমার কাছে মনে হয়েছে এই নীরবতা সেটার একটি জবাব হতেপারে। UTMB TRAIL ম্যারাথনে শেষ করে সেই সমালোচনার ইতি টানবেন এমনটাই প্রত্যশা করি।
এবার একটু বলি ফুকেট 100K আল্ট্রা ম্যারাথন এর বিষয়ে। ফুকেট 100K আল্ট্রা ম্যারাথন থাইল্যান্ডের ফুকেটে অনুষ্ঠিত একটি আলট্রা ম্যারাথন। এটি এমন রানারদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা তাদের সীমাবদ্ধতা কে ঠেলে দিতে চায় উঁচু নিচু, রেস ট্র্যাকের উপর। এই পথে রয়েছে সৈকত, পাহাড় এবং কখনও কখনও স্থানীয় গ্রাম সহ বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর দৃশ্যে। কিন্তু এটা আসলে অংশগ্রহণকারীদের জন্য ধৈর্য এবং মানসিকতার দৃঢ়তার পরীক্ষা যেখানে অনেক রানার ব্যর্থ হয়ে ফিনিসিং লাইন পার করতে পারে না।
ইমামুর ভাই নীরবে ফুকেট 100K আল্ট্রা ম্যারাথনের জন্য প্রস্তুত হন এবং তিনি রেসটি সম্পূর্ণ করেন। আমি মনে করি তার এই পারফরম্যান্স শুধু ব্যক্তিগত জয় ছিল না এটি ছিল সংকল্পের বিজয় এবং গর্বের একটি মুহূর্ত। সকল রানাদের পক্ষথেকে তাকে জানাই আন্তরিক অভিনিন্দন। আমাদের কাছে ইমামুর ভাই শুধু একজন দৌড়বিদ নন, তিনি একজন স্বপ্ন তাড়া করা মানুষ, আর হা লেখার শেষে ঐ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তর টাও পেয়ে গেছি। যারা ১০০ কিলোমিটার বা তার বেশি দূরত্বের আলট্রা রান করে তারা আসলে স্বপ্নবাজ মানুষ আর স্বপ্ন তারা করাই তাদের কাজ। কে কি বললো তাতে কিছু যায় আসে না।