কুকুর করে ভয় ? ভয় পেলে যা হয়

রানাদের জন্য রীতিমতো আতঙ্কের বিষয় হলো এই কুকুর। বিশেষ করে যারা একা লং রান করেন। গতকাল আমি ৩২ কিঃমিঃ রানের শেষ দিকে হাতিরঝিলে এসে কুকুরের তারার মুখে পরি কিন্তু বরাবরের মতো কুকুর মহাশয় আমার উপর হতাশ হয়ে তারা করা ছেড়ে দেয় । এর আগেও আমি কয়েক বার কুকুরের তারা খেয়েছি এবং সফলতার সাথে তাদের শান্ত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। নিশ্চই জানতে ইচ্ছে করছে কিভাবে ? অবশই বলবো। তার আগে জেনে নেই কুকুর কেন রানারদের তারা করে।
মজার বিষয় হলো কুকুরদের নিজেস্ব একটি এলাকা থাকে এক এলাকার কুকুর সাধারণত অন্য এলাকায় গিয়ে কাউ কে আক্রমণ করে না কিন্তু আপনি যখন কুকুরের নিজেস্ব এলাকায় দৌড়াতে দৌড়াতে ঢুকে পড়েন স্বাভাবিক ভাবেই কুকুরের নজরে পড়তে পারেন। কারণ বিপদে না পড়লে খুব কম মানুষ এভাবে দৌড়ায় 🙂 । আসলে মহান আল্লাহ কুকুরকে এভাবেই বানিয়েছেন যে তারা কোনো কিছু অস্বাভাবি দেখলে প্রতিক্রিয়া করবে। তাহলে কুকুর যদি সত্যি সত্যি আপনি কিভাবে নিজেকে সেভ করবেন ?
লেখায় আমার কিছু ব্যক্তিগত পদ্ধতির কথা বলবো। আপনার কাছে কার্যকর মনে না হলে ফলো করবেন না । এবং লেখায় কোনো পদ্ধতি প্রয়গ করার পরও যদি কুকুরের আক্রমনের শিকার হন তাহলে ভাববেন দিনটি আপনার জন্য ছিল না এবং আমি অবশই দায়ী থাকবোনা । মানা না মানা সপূর্ণ আপনার নিজেস্ব বিষয়।
চলুন একটু জানার চেষ্টা করি কিভাবে কুকুরের তারা থেকে বাঁচবেন:-
শান্ত থাকুন: দৌড়ানোর সময় আপনি যদি কুকুরের মুখোমুখি হন তবে শান্ত থাকার চেষ্টা করুন। কারণ আপনি যদি আতংকিত হয়ে অস্বাভিক আচরণ করেন সেটা পরিস্থিতিকে আরো খারাপ করে তুলবে। মনে রাখবেন বেশিরভাগ কুকুর একটু ঘেঁউ ঘেঁউ করে আপনাকে পরোখ করে দেখবে ।
ধীরগতি করুন: কুকুরটি যদি আক্রমণাত্মক না হয় এবং কৌতূহলী মনে হয় তবে আপনার গতি কমিয়ে বা থামানোর কথা ভাবতে পারেন। এতে কুকুরটি আগ্রহ হারিয়ে দূরে সরে যেতে পারে। কিন্তু যদি আপনি আরো বেশি গতি বারিয়ে পালতে চেষ্টা করেন তাহলে বিপদে পরার সম্ভাবনা আরো বাড়ে যাবে কারণ কুকুর আপনার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে দৌড়াতে পারে ।
সরাসরি চোখের দিকে তাকাবেন না : আপনি যদি সাহস দেখতে যেয়ে সরাসরি কুকুরের চোখের দিকে তাকান তাহলে কুকুর সেটাকে চ্যালেঞ্জ বা হুমকি হিসাবে দেখতে পারে এবং সে আপনাকে নিজের হুঁমকি হিসাবে দেখে আরো বেশি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে। কারণ এর মানে আপনি তার সাথে মারামারি করতে চাইছেন। পানি হয়তো খেয়াল করেছন ২টা কুকুর মারামারি লাগার আগে অনেক্ষন একে ওপরের চোখে তাকিয়ে হুমকি ধামকি দেয়। আর হাঁ রাস্তায় কোনো সত্যিকারের পাগলের সামনে পড়লেও এটা প্রয়োগ করতে পারেন।
ইগনোর করুন : কুকুরের সামনে দিয়ে যাবার সময় তার দিকে না তাকিয়ে চলে যেতে চেষ্টা করুন। যতই ঘেঁউ ঘেঁউ করুক পুরুপুরি পিছন ফিরে তাকাবেন না জাস্ট মাথাটা অল্প একটু ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করুন কুকুর টি আপনার পিছু নিয়েছে কিনা। সরাসরি কুকুরের চোখের দিকে না তাকানো এবং তাকে ইগনোর করাটা খুই কাজের আমি নিজেই এর ফল হাতে-নাতে পেয়েছি।
ফ্রেন্ডলি হবার চেষ্টা করুন: কুকুর যদি খুব কাছে চলে আসে তাহলে অবশই শান্ত থেকে ফ্রেইন্ডলি হবার চেষ্টা করুন। মুখে চুক-চুক-চুক শব্দ করে স্বাভাবিক থাকুন। এবং আস্তে আস্তে কেটে পরতে চেষ্টা করুন। আর আপনার সাথে যদি খাবার কিছু থাকে সেটা একটু দূরে ছুড়ে মারতে পারেন এতে করে সে আপনার পিছু করা ছেড়ে দিতে পারে।
কমান্ড দিন: ঢাকার রাস্তায় কুকুর গুলো বেশির ভাগ মানুষের কমান্ড শুনে অভ্যস্ত তাই সে পিছু নিলে আপনি স্বাভাবিক গলায় বলতে পারেন “না” “থাম”, “যা যা” পাশাপাশি একটু ইংরিজিও বলতে পারেন “নো”, “স্টপ”,”গো” ইত্যাদি। আপনার ভয়েস যেন শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী থাকে তা নিশ্চিত করুন। তবে রাগ দেখতে যাবেন না। ও হাঁ এই পরিস্থিতে বেশি স্বাভাবিকতা দেখতে যায়ে আবার দাঁত কেলিয়ে হাসতে যাবেন না এতে বিপদ বাড়তে পারে। কারণ অনেক কুকুর ভাবতে পারে আপনি দাঁত দেখিয়ে আপনার রাগ দেখছেন। 😀
কুকুরের শাররীক ভাষা জানুন : মজার বিষয় হলো কুকুরের লেজ এবং কান দেখে আপনি বুজতে পারেন যে এটি আপনাকে আক্রমণ করতে চায় না আপনার সাথে জাস্ট একটু মজা করতে চায়। আপনি যদি দেখেন তার লেজটি এবং কান গুলো খাড়া অবস্থায় আছে তাহলে অবশই সাবধান হবেন। আর যদি দেখেন কুকুরটি তার লেজ ডানে বামে নাড়ছে এবং কান স্বাভাবিক অবস্থায় আছে তাহলে চিন্তা করবেন না সে হয়তো আপনার কাছে খাবার চাইছে। আর যদি দেখেন লেজ পুরোপুরি নিচু করে রেখেছে তাহলে বুজবেন সে ভয় পাচ্ছে সে ক্ষেত্রেও একটু সাবধান হন কারণ ভয় পেয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য আক্রমণ করতে পারে।
পালিয়ে যাবেন না: আক্রমনাত্মক আচরণ করছে এমন কুকুরের কাছ থেকে পালিয়ে যাওয়া একটি তার তাড়া করার প্রবৃত্তিকে ট্রিগার করতে পারে। এর পরিবর্তে, একটু দাঁড়ান এবং ধীরে ধীরে চলে যান।
আত্মরক্ষা করুন : এতো কিছুর পরও যদি আক্রমণ করেই ফেলে তাহলে প্রথমেই কুকুরের নাকে এবং চোখে আঘাত করুন এগুলো দুর্বল জায়গা। চেষ্টা করতে পারেন পিছনের পা ধরে উঁচু করে দূরে ছুড়ে ফেলে দিতে। আসলে এখন আপনার পরিস্তিতে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া ছাড়া কিছু করার নেই। দিনটি আপনার জন্য না তাই আমার এই লেখা আপনাকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। যেভাবেই হোক নিজেকে রক্ষা করুন। কুকুরের কামড় বা খুব অল্পও নখের আঁচড় লাগলে ডাক্তারের কাছে অবশই যেতে হবে ।
মনে রাখবেন যে বেশিরভাগ কুকুর আক্রমণাত্মক নয় এবং কেবল কী ঘটছে তা পরীক্ষা করতে চায়। সুতরাং নিজেকে শান্ত রেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন ভয় আপনাকে আরো বিপদে ফেলবে।
হ্যাপি রানিং